৫০ হাজার টাকার মধ্যে সেরা স্মার্টফোন
প্রযুক্তির যুগে মোবাইল ফোন ছাড়া টিকে থাকা দুষ্কর। মোবাইল ফোন প্রযুক্তিকে আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। প্রযুক্তির বিপ্লবের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যেতে হলে উন্নত প্রযুক্তির মোবাইল ফোনের বিকল্প নেই। আর তাই দুর্দান্ত ফিচারযুক্ত আধুনিক প্রযুক্তির মিশেলে তৈরি মোবাইলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
এক্ষেত্রে বিশেষ লক্ষণীয় বিষয় হলো মোবাইল ফোনের ডিজাইন, ফিচারগুলো কতটা অত্যাধুনিক, পারফরম্যান্স কতটা শক্তিশালী, ক্যামেরা প্রযুক্তি কতটা উন্নত, এবং সর্বশেষ এর ব্যাটারির স্থায়িত্ব কেমন? সর্বোপরি আধুনিক যুগের সাথে চলনসই মোবাইল ফোন কোনগুলো? কেননা, এসব জানা না থাকলে আপনি বিব্রত হতে পারেন কোনটা আপনার জন্য উপযোগী সেটা ভাবতে গিয়ে।
৫০,০০০ টাকায় ৫টি ফোনের তালিকা
এই পর্বে থাকছে ৫০ হাজার টাকা সমমানের মোবাইলগুলোর বিস্তারিত। পুরো আলোচনা জুড়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মোবাইলগুলোর বিবরণ দেওয়ার চেষ্টা করবো।
Samsung Galaxy A55 5G

শুরু করছি Samsung Galaxy A55 5G দিয়ে। এটি এমন একটি স্মার্টফোন যা আধুনিক প্রযুক্তি এবং চমৎকার ডিজাইনের সমন্বয়ে তৈরি। মিড-রেঞ্জ ফোনগুলোর মধ্যে এই ডিভাইসটিকে সবচেয়ে সেরাদের কাতারে এগিয়ে রাখা যাবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এর কিছু দুর্দান্ত ফিচার:
শুরুতেই সবার আগ্রহ জাগবে ডিজাইন ও ডিসপ্লে নিয়ে। এর মডার্ন এবং স্লিম ডিজাইন আপনাকে বেশ আকর্ষিত করবে। এতে রয়েছে 6.5 ইঞ্চির FHD+ Super AMOLED ডিসপ্লে, যার রিফ্রেশ রেট 120Hz। অর্থাৎ আপনি বেশ ঝকঝকে ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতা পেতে যাচ্ছেন।
ডিজাইনের পরেই আসে পারফরম্যান্স। এই ফোনে শক্তিশালী Exynos 1380 প্রসেসর এবং 8GB র্যাম ব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলে মাল্টিটাস্কিং বা গেমিং-এর ক্ষেত্রে আপনি বেশ দারুণ অভিজ্ঞতা পাবেন। এতে আপনি পাচ্ছেন 5G এর এক্সপেরিয়েন্স।
মুঠোফোনের ক্ষেত্রে অন্যতম আরেকটি আকর্ষণ হলো এর ক্যামেরা। এই ফোনের ক্যামেরা আপনাকে বেশ মোহিত করবে। এতে রয়েছে 64MP প্রাইমারি ক্যামেরা, 12MP আল্ট্রা-ওয়াইড লেন্স এবং 5MP ম্যাক্রো লেন্স। সেলফির জন্য রয়েছে 32MP ফ্রন্ট ক্যামেরা। অর্থাৎ দু’দিকে থেকেই বেশ ভালো অভিজ্ঞতা দেবে।
এর ব্যাটারির সক্ষমতা 5000mAh এবং এটি 25W ফাস্ট চার্জিং ক্ষমতা সম্পন্ন হওয়ায় এটি দীর্ঘসময় ব্যবহার করা যায় এবং দ্রুত চার্জ হয়।
এছাড়াও ফোনটিতে ইন-ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর, One UI 6.0 ইন্টারফেস এবং IP67 রেটিং থাকায় এটি ধুলো ও পানিরোধী।
সবশেষে, এই ফোনটি যারা প্রিমিয়াম ফিচারস সহ একটি নির্ভরযোগ্য ফোন খুঁজছেন তাদের জন্য হতে পারে বেশ দারুণ একটি চয়েজ।
Galaxy S21 FE 5G

Samsung Galaxy S21 FE 5G স্মার্টফোনটি প্রিমিয়াম ফিচারযুক্ত এবং সাশ্রয়ী মূল্যের দুর্দান্ত মিশেলে তৈরি। এতে 6.4-ইঞ্চি Dynamic AMOLED 2X ডিসপ্লে রয়েছে৷ যার রিফ্রেশ রেট 120Hz। যার ফলে আপনি বেশ দুর্দান্ত ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতা পেতে যাচ্ছেন। ডিসপ্লের সুরক্ষার জন্য এতে রয়েছে Gorilla Glass Victus, যা এর টেকসই ক্ষমতাকে আরও বাড়িয়েছে।
এবার আসি পারফরম্যান্সের বিস্তারিত বর্ণনায়। এতে রয়েছে শক্তিশালী Exynos 2100 বা Snapdragon 888 প্রসেসর। যার ফলে মাল্টিটাস্কিং এবং গেমিংয়ের ক্ষেত্রে আপনি বেশ দারুণ অভিজ্ঞতা পাবেন। এতে রয়েছে 8GB RAM এবং 128GB/256GB স্টোরেজ যা আপনাকে পর্যাপ্ত স্পেস এবং স্পিড দেবে।
এর ট্রিপল রিয়ার ক্যামেরা সেটআপ আপনাকে বেশ মোহিত করবে। এতে 12MP প্রধান ক্যামেরা, 12MP আল্ট্রাওয়াইড এবং 8MP টেলিফটো লেন্স রয়েছে। যা চমৎকার ছবি এবং 30x স্পেস জুম অফার করে। এর ফ্রন্ট ক্যামেরাটি 32MP এর। যা আপনাকে ঝকঝকে ছবি উপহার দিবে।
এর ব্যাটারির সক্ষমতা 4500mAh। এতে 25W ফার্স্ট চার্জিং এবং 15W ওয়্যারলেস চার্জিং ক্ষমতা রয়েছে। যা এটিকে আরও দুর্দান্ত করে তোলে। এতে IP68 রেটিং থাকায় এটি পানি ও ধুলা প্রতিরোধী।
ডিজাইনের ক্ষেত্রে Galaxy S21 FE 5G অনন্য। এটি চারটি আকর্ষণীয় রঙে পাওয়া যায় – Graphite, Olive, Lavender এবং White।
সবশেষে, যারা আধুনিক ফিচার, স্টাইল এবং স্থায়িত্ব সম্পন্ন ফোন চান, তাদের জন্য Samsung Galaxy S21 FE 5G একটি চমৎকার অপশন হতে পারে।
Pixel 7 Pro

Pixel 7 Pro কে বলা হয় গুগলের ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন। অত্যাধুনিক ফিচার, ডিজাইন এবং শক্তিশালী পারফরম্যান্সের জন্য এটি বেশ জনপ্রিয় সবার কাছে।
শুরুতেই এর ডিজাইন নিয়ে পর্যালোচনা করা যাক। এতে রয়েছে ৬.৭ ইঞ্চির QHD+ LTPO OLED ডিসপ্লে, যার রিফ্রেশ রেট ১২০Hz। এতে HDR10+ থাকায় এটি বেশ চমৎকার অভিজ্ঞতা দেয়। ডিসপ্লে প্রোটেকশনের জন্য এতে রয়েছে Gorilla Glass Victus এবং অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম। যা একে আরও টেকসই করে তোলে এবং দেখতে বেশ প্রিমিয়াম লুক দেয়।
এই ডিভাইসটি Google Tensor G2 প্রসেসর দ্বারা চালিত। যার ফলে মেশিন লার্নিং এবং এআই ফিচারকে আরও শক্তিশালী করেছে। এতে রয়েছে 12GB র্যাম এবং 128GB/256GB/512GB স্টোরেজ। যা ব্যবহারকারীদের পর্যাপ্ত স্পেস এবং স্পিড দেয়।
Pixel 7 Pro-র ক্যামেরা সেটআপ বেশ দুর্দান্ত। এতে 50MP ওয়াইড এঙ্গেল লেন্স, 48MP টেলি ফটো এবং 12MP আল্ট্রাওয়াইড সেন্সরসহ ট্রিপল ক্যামেরা সেটআপ রয়েছে। 30x সুপার রেস জুম, ম্যাক্রো ফোকাস এবং নাইটসাইট ফিচার থাকায় রাতেও আপনি বেশ দুর্দান্ত ছবি তুলতে পারবেন। এর ফ্রন্ট ক্যামেরাটি 10.8MP এর।
এতে 5000mAh ব্যাটারি এবং 30W ফাস্ট চার্জিংয়ের পাশাপাশি 23W ওয়্যারলেস চার্জিং সাপোর্ট রয়েছে। এছাড়াও আছে Android 13, এবং নিয়মিত আপডেট সুবিধা।
Pixel 7 Pro-তে রয়েছে ইন-ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর, ফেস আনলক, IP68 রেটিং যার ফলে এটি জল ও ধুলা প্রতিরোধী, এবং 5G কানেক্টিভিটি।
সবশেষে, Pixel 7 Pro-র দুর্দান্ত ফিচারগুলো ব্যবহারকারীদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজতম এবং উন্নত করে তুলবে। গুগলের ফোনগুলোর মধ্যে এটি নিঃসন্দেহে অন্যতম।
Motorola Edge 50 Pro 5G

Motorola Edge 50 Pro 5G একটি ফ্ল্যাগশিপ পারফরম্যান্সযুক্ত দুর্দান্ত ক্যামেরা এবং আকর্ষণীয় ডিজাইন সম্বলিত মোবাইল যা অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি।
এতে 6.7-ইঞ্চি pOLED ডিসপ্লে রয়েছে। যার রিফ্রেশ রেট 144Hz এবং FHD+ (2400×1080 পিক্সেল) রেজুলেশন রয়েছে। যার ফলে আপনি বেশ ঝকঝকে স্ক্রিনের অনুভূতি পাবেন। এর ডিজাইন প্রিমিয়াম গ্লাস এবং মেটালের ফিনিশিং দেওয়া। দেখতে বেশ স্লিম হওয়ায় এটি আপনার জন্য বহন করতে বেশ আরামদায়ক হবে।
এতে শক্তিশালী Qualcomm Snapdragon 8 Gen 3 প্রসেসর রয়েছে। যার ফলে এটি আপনাকে দিবে বেশ দারুণ অভিজ্ঞতা। এতে রয়েছে 12GB LPDDR5X র্যাম, এবং 256GB/512GB UFS 4.0 স্টোরেজ। যা আপনাকে বেশ ভালো স্পেস এবং স্পিড দেবে। এতে Android 14 সফটওয়্যার রয়েছে। যার ফলে আপনাকে রেগুলার আপডেট নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা।
এতে 50MP (OIS সহ) এর মেইন ক্যামেরা, 50MP আল্ট্রাওয়াইড লেন্স এবং 12MP( 2X অপটিক্যাল জুম) এর টেলিফটো লেন্স রয়েছে।
এর সেলফি ক্যামেরাটি 60MP এর। যার ফলে আপনি ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে বেশ দারুণ অভিজ্ঞতা পাবেন।
এতে 5000mAh এবং 125W ফাস্ট চার্জিং ও 15W ওয়্যারলেস চার্জিং সুবিধা রয়েছে। এতে রয়েছে 5G কানেক্টিভিটি,Wi-Fi 7, ব্লুটুথ 5.3, USB-C 3.2 পোর্ট সিস্টেম। এতে IP68 রেটিং থাকায় এটি পানি ও ধুলা প্রতিরোধী। এতে ডুয়াল স্টেরিও স্পিকার রয়েছে। এছাড়াও এতে Dolby Atmos সাপোর্ট, আন্ডার-ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর রয়েছে।
সবশেষে, Motorola Edge 50 Pro 5G ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনের সব সুবিধা একত্রিত করার চেষ্টা করেছে। এর অত্যাধুনিক ক্যামেরা এবং শক্তিশালী প্রসেসর গেমিং, ফটোগ্রাফি, এবং মাল্টি-টাস্কিংয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা দেবে।
Honor 200 5G

Honor 200 5G স্মার্টফোন প্রযুক্তিতে নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে। যার দুর্দান্ত ডিজাইন এবং দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ও উন্নত প্রযুক্তির ক্যামেরার কারণে এটি সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। Honor 200 5G-তে রয়েছে 6.78 ইঞ্চির AMOLED ডিসপ্লে, যার রিফ্রেশ রেট 120Hz। এর বেজেললেস ডিজাইন এবং HDR10+ সাপোর্টের ফলে এটি ভিজ্যুয়ালি দারুণ অভিজ্ঞতা দেয়। এর স্টাইলিশ এবং স্লিম ডিজাইনের কারণে এটি আপনাকে বেশ আকর্ষিত করবে।
এতে রয়েছে শক্তিশালী MediaTek Dimensity 9200+ প্রসেসর, যার ফলে মাল্টিটাস্কিং এবং হাই-এন্ড গেমিংয়ের জন্য এটি বেশ দুর্দান্ত। এতে রয়েছে 16GB RAM এবং 512GB ইন্টারনাল স্টোরেজ। যার ফলে এটি বেশ ভালো স্পিড এবং স্পেস দেয়। এর ব্যাটারির ধারণক্ষমতা 5000mAh এবং এতে 66W সুপারফাস্ট চার্জিং সুবিধা রয়েছে। যার ফলে এটি দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করতে পারবেন।
Honor 200 5G-তে রয়েছে ট্রিপল ক্যামেরা সেটআপ। যাতে 200MP প্রধান ক্যামেরা, 50MP আল্ট্রা-ওয়াইড এবং 12MP টেলিফটো লেন্স রয়েছে। এতল নাইট ফটোগ্রাফি, পোর্ট্রেট মোড এবং 8K ভিডিও রেকর্ডিং সুবিধা রয়েছে। যা আপনাকে ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে দারুণ অনুভূতি দেবে। এর সেলফি ক্যামেরাটি 32MP, যার ফলে বেশ ঝকঝকে ছবি তোলা সম্ভব।
এটি ফাইভ-জি সমর্থিত হওয়ায় দ্রুত ডেটা স্পিড এবং স্ট্যাবল কানেক্টিভিটি প্রদান করে। এছাড়াও, ব্লুটুথ 5.3 এবং Wi-Fi 7 সাপোর্টের কারণে ডিভাইসটি আরও অত্যাধুনিক হয়ে উঠেছে। সবশেষে, Honor 200 5G আধুনিক প্রযুক্তি এবং আকর্ষণীয় ফিচার সম্বলিত একটি অসাধারণ স্মার্টফোন। সবমিলিয়ে দুর্দান্ত একটি স্মার্টফোন খুঁজলে এটি আপনার জন্য বেস্ট চয়েজ।
পরিশেষে, আপনার বাজেট ফ্রেন্ডলি এবং অত্যাধুনিক ফিচার সম্পন্ন, দুর্দান্ত ডিজাইন ও পারফরম্যান্স সম্বলিত মোবাইলের চাহিদা থাকলে উপরোক্ত আলোচিত মোবাইল গুলো হতে পারে আপনার জন্য বেশ দারুণ অপশন।
