মোবাইল হ্যাক থেকে বাঁচার উপায়

মোবাইল হ্যাক থেকে বাঁচার উপায়

আজকের ডিজিটাল যুগে মোবাইল ফোন হয়ে উঠেছে আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঘুম থেকে উঠার পর থেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিনিয়ত আমরা ফোন ব্যবহার করি। যোগাযোগ ছাড়াও আমরা আমাদের ফোনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, ফাইল, ছবি, এবং এমনকি ব্যাংকিং তথ্যও রাখি। কিন্তু এই সুবিধার পাশাপাশি আছে হ্যাকিংয়ের হুমকি। আমাদের অসাবধানতার কারণে হ্যাকাররা আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে, ফাইল নষ্ট করতে এবং এমনকি আমাদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরি করতে পারে। তাই, মোবাইল হ্যাক থেকে বাঁচার জন্য কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর উপায় আছে। আজকের ব্লগে আমরা আমাদের ফোনকে কিভাবে হ্যাকিং কিংবা সাইবার অ্যাটাক থেকে বাঁচাতে পারি তাই নিয়ে আলোচনা করবো

মোবাইল হ্যাক থেকে বাঁচার উপায়:

১. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন:

আপনার ফোন, অ্যাপ এবং ইমেইলের জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। পাসওয়ার্ডে অক্ষর, সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্নের মিশ্রণ রাখুন। সম্ভব হলে প্যাটার্ন লক এবং বায়োমেট্রিক লক ব্যবহার করা যা বেশি সিকিউরিটি দেয়। সোশ্যাল মিডিয়া, ব্যাংক, এবং বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। পাসওয়ার্ড নিয়মিত পরিবর্তন করুন, অন্তত ৯০-১৮০ দিন পর পর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। আপনার অ্যাকাউন্টে বেশি সিকিউরিটি দেয়ার জন্য সিকিউরিটি প্রশ্ন ব্যবহার করুন। 

২. অ্যাপ স্টোর থেকেই অ্যাপ ডাউনলোড করুন:

অজানা সোর্স থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করবেন না, সেক্ষেত্রে ম্যালওয়্যার যুক্ত অ্যাপ ফোনে ইনস্টল হতে পারে। গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোরের মতো বিশ্বস্ত সোর্স থেকেই অ্যাপ ডাউনলোড করুন। অ্যাপের রিভিউ পড়ে দেখুন এবং ডেভেলপারের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করুন। যদি কোনো অ্যাপ ম্যালওয়্যার আক্রান্ত হয় কিংবা আপডেট এর পর সিকিউরিটি ইস্যু দেখা দেয় সেক্ষেত্রে অ্যাপ আনস্টল করে ফেলুন। 

৩. অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন:

আপনার ফোনে একটি ভালো অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টল করে রাখুন। এটি আপনার ফোনকে ম্যালওয়্যার, ভাইরাস এবং অন্যান্য হুমকি থেকে রক্ষা করবে। অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারটি নিয়মিত আপডেট করুন। পাশাপাশি গুগল প্লে প্রোটেক্ট বর্তমানে অ্যান্টিভাইরাসের বিকল্প হিসেবে কাজ করে, আপনি চাইলে গুগল প্লে স্টোরের মাধ্যমে নিয়মিত আপনার ফোনের অ্যাপস গুলো স্কেন করতে পারেন, যদি কখনো কোনো থার্ড পার্টি অ্যাপসে সমস্যা হয়ে থাকে, সিকিউরিটি ওয়ার্নিং পেলে সেটি আনস্টল করে ফেলুন। 

৪. পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার এড়িয়ে চলুন:

পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকুন। পাবলিক ওয়াইফাইতে ব্যাংকিং বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবেন না। VPN ব্যবহার করুন যদি আপনাকে অবশ্যই পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করতে হয়। সাইবার অ্যাটাক এবং ফিশিং হয় মূলত এই পাবলিক ওফাইফাই ব্যবহারের ফলে। হ্যাকাররা ওয়াইফাই এর মাধ্যমে ফোনের ডাটা, পাসওয়ার্ড এবং কুকিস হ্যাক করে থাকে।  

৫. ফোনটি রুট করবেন না:

ফোন রুট করলে হ্যাকারদের জন্য আপনার ফোনে প্রবেশ করা সহজ হয়ে যায়। যদি আপনি ফোনের ফিচার বা কার্যক্ষমতা বাড়াতে চান তাহলে অন্য কোন নিরাপদ উপায় খুঁজুন। তবে রুট করলে ফোনের সিকিউরিটি ব্রেক হয়ে যায়, যার ফলে যেকোনো থার্ড পার্টি অ্যাপসের সাহায্য খুব সহজেই সাইবার অ্যাটাক হতে পারে। আপনি যদি অ্যাডভান্স ইউজার না হয়ে থাকেন, তবে বাড়তি ফিচারের জন্য কখনোই ফোন রুট করবেন না। এর ফলে আপনার ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এর পাশাপাশি আপনার ডাটা সিকিউরিটির জন্য একটা বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। 

৬. ফোনের সফটওয়্যার আপডেট রাখুন:

ফোনের অপারেটিং সিস্টেম এবং অ্যাপগুলো নিয়মিত আপডেট করুন। আপডেটগুলোতে সাধারণত নিরাপত্তা সংক্রান্ত ত্রুটি সংশোধন করা হয়। সেক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো প্রতি মাসে সিকিউরিটি প্যাঁচ দিয়ে থাকে, আপনার তথ্য নিরাপদ রাখার জন্য সবসময় আন্ড্রোয়েড আপডেট এর পাশাপাশি সিকিউরিটি আপডেট গুলো ইনস্টল করুন। 

৭. সোশ্যাল মিডিয়ায় সতর্ক থাকুন:

সোশ্যাল মিডিয়ায় অচেনা লোকদের থেকে আসা বার্তা বা লিংকগুলোতে ক্লিক করবেন না। আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব বেশি শেয়ার করবেন না। অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়াও ফোনের মেসেজে অনেক ধরনের স্প্যাম লিঙ্ক আসে যেগুলো ওপেন করার আগে সতর্ক থাকুন। এইসব লিঙ্কে প্রবেশ করার ফলে হ্যাকার আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ছাড়াও ফোনে খুব সহজেই যেকোনো রিমোট এক্সেস নিতে পারে। 

৮. ফোন হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে:

যদি আপনার ফোন হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে যায় তাহলে অবিলম্বে ফোনটি লক করে দিন এবং আপনার ব্যাংক এবং অন্যান্য অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের পাশাপাশি অতিসত্বর সিম রিপ্লেস করুন। অনেক সময় সিম এর সাহায্যে একাউন্টগুলোতে এক্সেস নেয়া যায়। সেক্ষেত্রে আপনার ফোনটি হারিয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব স্টেপগুলো নিন। 

এই উপায়গুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার মোবাইল ফোনকে হ্যাকারদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ রাখতে পারবেন। আপনার মূল্যবান মন্তব্য জানান এবং ভালো লাগলে এই তথ্যবহুল আর্টিকেলটি শেয়ার করুন যাতে আরো অনেকে এই তথ্যগুলো জানতে পারে।

Similar Posts